ভূতের গল্প

 



ভূতের গল্প ভূতুড়ে বাগানবাড়ি শহরের বাইরে, পুরনো এক বাগানবাড়ি। নাম তার 'শান্তিনিড়'। কিন্তু বাস্তবে, সেটা মোটেই শান্ত নয়। বরং, সেখানে নাকি অশান্ত এক আত্মা ঘুরে বেড়ায়।

ভূতের গল্প:

ভূতুড়ে বাগানবাড়ি:

ভূতুড়ে বাগানবাড়ি

শহরের বাইরে, পুরনো এক বাগানবাড়ি। নাম তার 'শান্তিনিড়'। কিন্তু বাস্তবে, সেটা মোটেই শান্ত নয়। বরং, সেখানে নাকি অশান্ত এক আত্মা ঘুরে বেড়ায়।

গল্পটা শুরু হয় আজ থেকে প্রায় একশো বছর আগে। তখন এই বাগানবাড়ির মালিক ছিলেন রমেন্দ্র চৌধুরী, এক জন ধনী জমিদার। তাঁর স্ত্রী, লাবণ্য, ছিলেন অপরূপ সুন্দরী। কিন্তু তাঁদের কোনো সন্তান ছিল না। নিঃসন্তান হওয়ার কষ্টে লাবণ্য ধীরে ধীরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। একদিন, রাতে, তিনি নাকি পুকুরে ডুবে আত্মহত্যা করেন।

সেই থেকে, শান্তিনিড়ের রূপ বদলে যায়। রাতের বেলা, বাগানবাড়ির আশেপাশে অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটতে শুরু করে। লোকজন লাবণ্যর কান্নার আওয়াজ শুনতে পেত, দেখত পুকুরের ধারে সাদা শাড়ি পরা একটা ছায়া ঘুরে বেড়াচ্ছে। অনেকে দাবি করত, তারা লাবণ্যর আত্মা দেখেছে।

বছরখানেক আগে, কয়েকজন বন্ধু মিলে আমরা শান্তিনিড়ে গিয়েছিলাম। দিনের বেলাতেও বাড়িটা কেমন যেন দমবন্ধ করা ছিল। পুরনো আসবাবপত্র, ভাঙা দেয়াল, আর লতাপাতায় ঢেকে থাকা বাগান - সব মিলিয়ে একটা ভূতুড়ে পরিবেশ। আমরা ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম, আর নিজেদের মধ্যে লাবণ্যর গল্প নিয়ে আলোচনা করছিলাম।

বিকেল হয়ে গেলে আমরা ফিরে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তখনই আকাশ কালো করে বৃষ্টি নামল। আমরা আটকা পড়ে গেলাম। বাধ্য হয়ে, রাতটা সেখানেই কাটাতে হলো।

প্রথমে সবকিছু স্বাভাবিক ছিল। আমরা গল্পগুজব করছিলাম, আর বৃষ্টি থামার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, বাড়ির ভেতরটা যেন বদলে যেতে লাগল।

প্রথমে, আমরা হালকা কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম। আওয়াজটা আসছিল ভেতরের দিক থেকে। আমরা ভাবলাম, হয়তো কারও মন খারাপ, তাই কাঁদছে। কিন্তু কান্নাটা ক্রমশ বাড়তে লাগল। আর সেই কান্নার মধ্যে যেন একটা চাপা কষ্ট, একটা আকুতি ছিল।

তারপর, আমরা একটা ঠান্ডা বাতাস অনুভব করলাম। মনে হল, যেন কেউ আমাদের পাশ দিয়ে হেঁটে গেল। কিন্তু আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেলাম না।

আমরা তিনজনেই ভয় পেয়ে গেছিলাম। ঠিক করলাম, আর এক মুহূর্তও ওখানে থাকব না। কিন্তু যেই আমরা দরজা খুলে বেরোতে যাব, অমনি দরজাটা আপনা-আপনি বন্ধ হয়ে গেল। আমরা ধাক্কা দিলাম, লাথি মারলাম, কিন্তু কিছুতেই খুলতে পারলাম না।

আমরা যেন বন্দি হয়ে গেছি।

https://ojanapothe.blogspot.com/2025/06/blog-post_16.html

এরপর যা ঘটল, তা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। আমরা স্পষ্ট দেখতে পেলাম, ঘরের এক কোণে, সাদা শাড়ি পরা একটা ছায়া দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখটা দেখা যাচ্ছিল না, কিন্তু তার চোখ দুটো জ্বলছিল। যেন দুটো লাল কয়লা।

ছায়াটা ধীরে ধীরে আমাদের দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। আর তার শরীর থেকে একটা পচা গন্ধ বেরোচ্ছিল, যেমনটা মরা মানুষের শরীরে হয়। আমরা চিৎকার করতে চাইছিলাম, কিন্তু আমাদের মুখ দিয়ে কোনো আওয়াজ বেরোলো না।

আমরা তিনজনেই অজ্ঞান হয়ে গেলাম।

পরের দিন সকালে, যখন আমাদের জ্ঞান ফিরল, তখন আমরা দেখি, আমরা তিনজন বাগানে পড়ে আছি। বাড়ির দরজা খোলা, আর ভেতরে সবকিছু শান্ত। যেন কিছুই হয়নি।

আমরা আর এক মুহূর্তও দাঁড়াইনি। সোজা সেখান থেকে পালিয়ে আসি। সেই দিনের পর থেকে, আমরা আর কখনও শান্তিনিড়ের ধারেকাছেও যাইনি।

আজও, রাতের বেলা, যখন আমি একা থাকি, তখন আমার মনে হয়, যেন কেউ ফিসফিস করে কাঁদছে। আর আমি সেই সাদা শাড়ি পরা ছায়াটাকে দেখতে পাই, তার জ্বলন্ত চোখদুটো যেন আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন