ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প আমাদের গ্রামের পাশেই একটা পুরোনো পুকুর ছিল। পুকুরটা ছিল বেশ গভীর আর তার চারপাশ ঘিরে ছিল ঘন বাঁশঝাড়। দিনের বেলাতেও সেখানে কেমন যেন একটা অন্ধকার আর নীরবতা লেগে থাকত
ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প:
পুকুর পাড়ের ছায়া:
আমাদের গ্রামের পাশেই একটা পুরোনো পুকুর ছিল। পুকুরটা ছিল বেশ গভীর আর তার চারপাশ ঘিরে ছিল ঘন বাঁশঝাড়। দিনের বেলাতেও সেখানে কেমন যেন একটা অন্ধকার আর নীরবতা লেগে থাকত। গ্রামের বুড়োরা বলতেন, বহু বছর আগে নাকি ওই পুকুরে ডুবে এক যুবতীর মৃত্যু হয়েছিল, আর সেই থেকেই তার আত্মা নাকি ওখানে ঘুরে বেড়ায়। বিশেষ করে রাতের বেলা পুকুর পাড়ে কেউ গেলে, তাকে নাকি দেখতে পাওয়া যায়।
আমি তখন কলেজে পড়ি। বিজ্ঞান নিয়ে পড়তাম, তাই ভূতের গল্পটল্পে তেমন বিশ্বাস ছিল না। একদিন বন্ধুদের সঙ্গে পুকুর পাড়ে আড্ডা দিতে গিয়েছিলাম সন্ধ্যায়। পূর্ণিমা রাত ছিল, চাঁদের আলো পুকুরের জলে চিকচিক করছিল। চারপাশটা বেশ শান্ত ছিল, শুধু ঝিঁঝি পোকার একটানা ডাক শোনা যাচ্ছিল।
আড্ডা যখন প্রায় শেষের দিকে, তখন হঠাৎ করে পুকুরের দিক থেকে একটা অস্পষ্ট কান্নার আওয়াজ ভেসে এলো। প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম হয়তো কোনো শিয়াল কাঁদছে, কিন্তু আওয়াজটা ক্রমশ স্পষ্ট হতে লাগলো। মনে হচ্ছিল যেন কোনো মেয়ে কাঁদছে, আর সেই কান্নাটা খুবই করুণ ছিল।
আমার এক বন্ধু, যে ভূতের গল্পে খুব বিশ্বাস করত, ভয়ে ফ্যাকাসে হয়ে বলল, "দেখেছিস? বলেছিলাম না!"
আমরা কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম। কান্নার আওয়াজটা তখনও ভেসে আসছিল। কৌতূহলবশত আমি পুকুরের দিকে এগিয়ে গেলাম। আমার বাকি বন্ধুরা আমাকে বারণ করলো, কিন্তু আমি শুনলাম না।
পুকুরের পাড়ে বাঁশঝাড়ের কাছে যেতেই, আমি যা দেখলাম, তাতে আমার রক্ত হিম হয়ে গেল। পুকুরের জলের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, সেখানে একটা আবছা ছায়া ভেসে বেড়াচ্ছে। ছায়াটা দেখতে অনেকটা লম্বা চুলের এক মহিলার মতো। তার মুখটা জলের দিকে নিচু করা ছিল, আর তার শরীর থেকে একটা ঠাণ্ডা ভাপ বের হচ্ছিল।
কান্নার আওয়াজটা যেন সেই ছায়া থেকেই আসছিল। আমি ভয়ে কয়েক পা পিছিয়ে এলাম। আমার মনে হচ্ছিল, যেন কেউ আমার গলা টিপে ধরছে। আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো।
ঠিক সেই সময়, জলের সেই ছায়া ধীরে ধীরে মুখ তুললো। চাঁদের আলোয় আমি তার মুখটা স্পষ্ট দেখতে পেলাম না, কিন্তু তার চোখ দুটো দেখলাম। দুটো বিশাল, শূন্য কালো গর্ত। সেই চোখের দিকে তাকালে মনে হচ্ছিল যেন কেউ আমার ভেতরটা টেনে বার করছে।
https://ojanapothe.blogspot.com/2025/06/blog-post_79.html
আমি আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালাম না। চিৎকার করতে করতে দৌঁড়ে বন্ধুদের কাছে ফিরে গেলাম। তারা আমার মুখের অবস্থা দেখে নিজেরাই ভয় পেয়ে গেল। আমরা সঙ্গে সঙ্গে ওখান থেকে পালিয়ে এলাম।
পরের দিন সকালে আমরা কয়েকজন সাহস করে আবার পুকুর পাড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে কিছুই দেখতে পাইনি। শুধু শান্ত জল আর সেই নীরব বাঁশঝাড়।
তবে সেই রাতের ঘটনা আমি আজও ভুলতে পারিনি। বিজ্ঞান হয়তো ভূতের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারবে না, কিন্তু পুকুর পাড়ের সেই ছায়া আর তার কান্নার আওয়াজ আমার মনে গেঁথে আছে। এরপর থেকে পূর্ণিমা রাতে আমি আর কখনও একা সেই পুকুরের ধারে যাইনি। গ্রামের বুড়োদের কথা এখন আমার বিশ্বাস হয়। হয়তো সত্যিই ওখানে কোনো অতৃপ্ত আত্মা ঘুরে বেড়ায়।