ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প পুরোনো দিনের গ্রাম্য পথ সেদিন ছিল পূর্ণিমার রাত। চারদিকে রুপোলি আলোয় ভেসে যাচ্ছিল সবকিছু। শহর থেকে আমার এক বন্ধুর গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলাম। গ্রামটা বেশ নির্জন,
ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প:
পুরোনো দিনের গ্রাম্য পথ:
সেদিন ছিল পূর্ণিমার রাত। চারদিকে রুপোলি আলোয় ভেসে যাচ্ছিল সবকিছু। শহর থেকে আমার এক বন্ধুর গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলাম। গ্রামটা বেশ নির্জন, আর গ্রামের ভেতর দিয়ে যে রাস্তাটা গেছে, সেটা বহু পুরোনো। রাস্তার দু'পাশে ঘন জঙ্গল, আর মাঝে মাঝে পুরোনো, পোড়ো বাড়ি দেখা যায়। এই রাস্তা দিয়ে সচরাচর রাতে কেউ যাতায়াত করে না, কারণ গ্রামের মানুষ বলে, এই পথে নাকি অলৌকিক কিছু ঘটে।
আমি যদিও এসব ভূতের গল্পে বিশ্বাস করি না, কিন্তু রাতের বেলা নির্জন পথে একা যেতে কিছুটা গা ছমছম করছিল। বাইকে করে যাচ্ছিলাম, তাই তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাব ভেবেছিলাম। হঠাৎ, বাইকের হেডলাইটটা নিভে গেল। এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো বুকটা ধড়ফড় করে উঠল। রাস্তার মাঝখানে বাইক বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে একটা বিশাল সমস্যা। আমি বাইকটা একপাশে থামিয়ে কারণ বোঝার চেষ্টা করলাম।
অনেক চেষ্টা করেও বাইকটা চালু করতে পারলাম না। অগত্যা ঠিক করলাম, বাকি পথটা হেঁটেই যাব। মোবাইল ফোনের আলো জ্বেলে হাঁটতে শুরু করলাম। পূর্ণিমার আলো থাকলেও, জঙ্গলের কারণে রাস্তাটা বেশ অন্ধকার ছিল।
কিছুদূর যেতেই, আমি একটা অদ্ভুত শব্দ শুনতে পেলাম। শব্দটা যেন বাতাসের শিস কাটার মতো, কিন্তু তার মধ্যে একটা চাপা গোঙানি মিশে আছে। আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম। শব্দটা আমার খুব কাছ থেকে আসছিল। মনে হলো যেন কেউ আমার পাশ দিয়ে হেঁটে গেল। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না।
আমি আবার হাঁটতে শুরু করলাম। এবার শব্দটা আরও স্পষ্ট হলো। মনে হলো যেন কেউ খুব কাছে দাঁড়িয়ে হাসছে, কিন্তু সেই হাসিটা মানুষের হাসি নয়। একটা অশরীরী, ঠাণ্ডা হাসি। আমার সারা শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠল। আমি দ্রুত পা চালালাম।
হঠাৎ করেই, রাস্তার মাঝখানে একটা সাদা শাড়ি পরা ছায়া দেখতে পেলাম। প্রথমে মনে হলো, কোনো গ্রাম্য মহিলা। কিন্তু ছায়াটা ধীরে ধীরে আমার দিকে এগিয়ে আসছিল, আর তার পা দুটো মাটি থেকে কয়েক ইঞ্চি উপরে ভাসছিল! ছায়াটার মুখ দেখা যাচ্ছিল না, কারণ চুল দিয়ে ঢাকা ছিল। কিন্তু আমি তার চোখ দুটো দেখতে পাচ্ছিলাম। টকটকে লাল, যেন দুটো জ্বলন্ত অঙ্গার।
আমি চিৎকার করে উঠলাম! বাইকের কাছে ফিরে যেতে চাইলাম, কিন্তু আমার পা দুটো যেন পাথরের মতো ভারী হয়ে গিয়েছিল। সাদা শাড়ি পরা ছায়াটা খুব দ্রুত আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। তার শরীর থেকে একটা পচা, মিষ্টি গন্ধ আসছিল, যেমনটা পুরোনো ফুলে পচা গন্ধ হয়।
ছায়াটা যখন আমার খুব কাছে চলে এলো, তখন সে তার হাতটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিল। সেই হাতটা ছিল অসম্ভব লম্বা আর তার নখগুলো ছিল কালো আর ধারালো। আমি চোখ বন্ধ করে চিৎকার করতে লাগলাম। আমার মনে হলো, এই বুঝি আমার শেষ দিন।
https://ojanapothe.blogspot.com/2025/06/blog-post_79.html
ঠিক সেই মুহূর্তে, একটা গাড়ির হেডলাইটের আলো আমার চোখে এসে পড়ল। একটা ট্রাক হর্ন বাজাতে বাজাতে আমার দিকে এগিয়ে আসছিল। ট্রাকের আলোয় সেই সাদা ছায়াটা যেন হঠাৎ করেই মিলিয়ে গেল।
ট্রাকটা আমার পাশে এসে থামল। ড্রাইভার আমাকে দেখে অবাক হলেন। তিনি জানতে চাইলেন, আমি এত রাতে এখানে কী করছি। আমি কোনোমতে তাঁকে সব কথা খুলে বললাম। ড্রাইভার বললেন, "ভাগ্যিস আমি এসেছিলাম। এই রাস্তায় রাতে অনেক কিছু দেখা যায়। আপনার মতো অনেকেই এই রাস্তায় বিপদে পড়েছেন।"
তিনি আমাকে তার ট্রাকে তুলে নিলেন এবং আমার বন্ধুর গ্রামে পৌঁছে দিলেন। সেই রাতের ঘটনাটা আমি কোনোদিন ভুলতে পারিনি। আজও যখন পূর্ণিমার রাতে নির্জন রাস্তা দেখি, তখন সেই সাদা শাড়ি পরা ছায়াটার কথা মনে পড়ে যায়। সেই রাতের পর থেকে আমি আর কোনোদিন রাতে সেই পুরোনো দিনের গ্রাম্য পথে একা যাইনি।