#অজানা দ্বীপের রহস্য

 


অজানা দ্বীপের রহস্য: ভূমিকা

দক্ষিণ চীন সাগরের বিশাল জলরাশির বুকে লুকিয়ে ছিল এক রহস্যময় বিন্দু, যা কোনো মানচিত্রের পাতায় ঠাঁই পায়নি। লোকমুখে এর নাম ছিল না, ছিল শুধু পুরনো নাবিকদের ফিসফিসানি, যেখানে এই দ্বীপের উল্লেখ আসত ভয় আর কিংবদন্তীর মোড়কে। এটি ছিল এক অজানা দ্বীপ, যা কেবল "নিঃশব্দতা" নামে পরিচিত ছিল কিছু বিরল নথিপত্রে।

নবীন সমুদ্রবিজ্ঞানী অর্ণব মিত্র, যিনি বৈজ্ঞানিক তথ্যে বিশ্বাসী, কখনোই এই রূপকথায় কান দেননি। কিন্তু তার গুরু, এক প্রবীণ অধ্যাপকের হাতে আঁকা এক মানচিত্র তার সমস্ত যুক্তির বেড়াজাল ভেঙে দিল। সেই মানচিত্রে একটি ছোট্ট বিন্দুর পাশে লেখা ছিল কেবল একটি শব্দ"নিঃশব্দতা" এই রহস্যময় শব্দটাই অর্ণবকে টেনে নিয়ে গেল এক অদম্য অনুসন্ধানের পথে।

অর্ণব তার ছোট একটি দল নিয়ে যাত্রা শুরু করল সেই অদৃশ্য দ্বীপের উদ্দেশ্যে। উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ আর আকস্মিক ঝড়ের মুখোমুখি হয়ে অবশেষে তারা পৌঁছাল এক কুয়াশাচ্ছন্ন উপকূলে। পাথরের সুউচ্চ দেওয়াল আর লতা-পাতায় ঢাকা প্রাচীন তোরণ তাদের স্বাগত জানাল। কিন্তু দ্বীপে পা রেখেই তারা অনুভব করল এক অদ্ভুত নীরবতা – পাখির ডাক নেই, বাতাসের শনশন শব্দ নেই, যেন প্রকৃতি এখানে শ্বাসরুদ্ধ করে আছে।

সেই নীরবতার গভীরে লুকিয়ে ছিল এক প্রাচীন সভ্যতার অজানা ইতিহাস, এক বিলুপ্ত শক্তির রহস্য। এই নীরবতাই কি দ্বীপের সবচেয়ে বড় প্রহরী, নাকি এর গভীরে আরও ভয়াবহ কিছু অপেক্ষা করছে? অর্ণব আর তার দল কি পারবে এই অজানা দ্বীপের রহস্য ভেদ করে অক্ষত অবস্থায় ফিরে আসতে, নাকি তারাও এই চিরন্তন নীরবতার অংশ হয়ে যাবে?


অজানা দ্বীপের রহস্য

দক্ষিণ চীন সাগরের বুকে জনমানবহীন এক মানচিত্রের বাইরে ভেসে থাকা দ্বীপ। এর নাম কোথাও লেখা নেই, কোনো নথিপত্রে এর উল্লেখ নেই। এই দ্বীপের অস্তিত্ব ছিল শুধু কিছু প্রাচীন নাবিকের ভাঙা গল্পের অংশ, যা লোকমুখে ফিরে আসত রহস্য আর ভয়ের চাদর জড়িয়ে।
নবীন বিজ্ঞানী অর্ণব মিত্র, সমুদ্রবিজ্ঞানে তাঁর গবেষণার জন্য পরিচিত, এসব গল্পে কখনো বিশ্বাস করতেন না। কিন্তু তার পুরনো শিক্ষকের ডায়েরিতে পাওয়া একটি হাতে আঁকা মানচিত্র তার কৌতূহল জাগিয়ে তুলল। মানচিত্রে একটি ক্ষুদ্র বিন্দুর মতো দ্বীপের উল্লেখ ছিল, যার পাশে লেখা ছিল একটি শব্দ – "নিঃশব্দতা"।

অর্ণব তার ছোট দল নিয়ে বেরিয়ে পড়ল সেই অজানা দ্বীপের খোঁজে। তাদের যাত্রাপথ ছিল ভয়ংকর, ঘূর্ণিঝড় আর উত্তাল ঢেউয়ের সাথে লড়াই করে অবশেষে তারা পৌঁছালো এক ঘন কুয়াশার চাদরে মোড়া উপকূলে। দ্বীপের চারিদিকে সুউচ্চ পাথরের দেওয়াল, আর তার ওপর দিয়ে ঝর্ণার মতো নেমে আসছে সবুজ লতা-পাতা।

অর্ণব আর তার দল যখন দ্বীপে পা রাখল, তখন তাদের প্রথম অনুভূতি ছিল এক অদ্ভুত নীরবতা। পাখিদের কলরব নেই, ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ নেই, এমনকি বাতাসের শনশন শব্দও অনুপস্থিত। মনে হচ্ছিল যেন দ্বীপটি শ্বাসরুদ্ধ করে আছে।

দ্বীপের ভেতরের দিকে এগোতেই তারা দেখতে পেল এক বিশাল প্রবেশপথ, যা মনে হচ্ছিল প্রাচীন কোনো সভ্যতার নিদর্শন। পাথরের তৈরি সেই তোরণ গাছপালায় ঢাকা, আর তার গায়ে কিছু অদ্ভূত চিহ্ন খোদাই করা। অর্ণবের ভাষাবিজ্ঞানী বন্ধু ঈশিতা চিহ্নগুলো দেখে অবাক হয়ে গেল। "এগুলো কোনো পরিচিত ভাষা নয়, অর্ণব," সে ফিসফিস করে বলল, "মনে হচ্ছে এগুলো কোনো প্রাচীন সুরের লিপি।"

তোরণের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করতেই তারা দেখল এক বিশাল বন, যেখানে গাছগুলো অদ্ভুতভাবে সোজা হয়ে আকাশের দিকে উঠে গেছে। আলো-আঁধারির সেই বনের মধ্যে তারা এগিয়ে যেতে লাগল। হঠাৎ তারা একটি ভাঙা মন্দির দেখতে পেল। মন্দিরটি পাথরের তৈরি, তার প্রতিটি কোণায় যেন কোনো প্রাচীন শক্তি ঘুমিয়ে আছে। মন্দিরের ভেতরে প্রবেশ করতেই অর্ণব দেখল, মেঝেতে একটি স্ফটিকের তৈরি পিরামিড রাখা আছে, যা থেকে হালকা আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে।

অর্ণব পিরামিডের কাছাকাছি যেতেই তার দলের সবার ঘড়ির কাঁটা বন্ধ হয়ে গেল, আর তাদের রেডিওতে শুধু সাদা গোলমাল ছাড়া আর কিছু শোনা গেল না। তাদের মনে হলো, সময় যেন এখানে থেমে গেছে।

"নিঃশব্দতা," অর্ণব ফিসফিস করে বলল, "আমার শিক্ষক হয়তো এই নীরবতার কথাই লিখেছিলেন।"

হঠাৎ পিরামিড থেকে একটি ক্ষীণ সুর ভেসে এলো। সেই সুরটি এতটাই মিষ্টি ছিল যে, তাদের মনকে শান্ত করে দিল। কিন্তু সুরের সাথে সাথে মন্দিরের দেয়াল থেকে কিছু অদ্ভুত চিত্র ভেসে উঠল। চিত্রগুলো মনে হচ্ছিল দ্বীপের ইতিহাস বর্ণনা করছে – এক উন্নত সভ্যতা যারা শব্দকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারত এবং এই পিরামিড ছিল তাদের শক্তির উৎস। এই ক্ষমতা দিয়ে তারা শুধু শব্দ নয়, সম্ভবত সময়কেও নিয়ন্ত্রণ করত। কোনো এক কারণে তারা বিলুপ্ত হয়ে গেছে, কিন্তু তাদের প্রযুক্তি রয়ে গেছে এই দ্বীপে।

হঠাৎ করেই মন্দিরের প্রবেশপথের দিক থেকে এক বিকট শব্দ শোনা গেল। বাইরে থেকে যেন কিছু একটা মন্দিরের দিকে আসছে। পিরামিডের আলো কেঁপে উঠল, আর সুরটি আরও তীব্র হলো। অর্ণব বুঝতে পারল, এই নির্জন দ্বীপের নীরবতার পেছনে লুকিয়ে আছে এক ভয়ঙ্কর শক্তি। হয়তো সেই শক্তিই এই সভ্যতার বিলুপ্তির কারণ, অথবা তারাই এই নীরবতার প্রহরী।

অর্ণব আর তার দল কি এই অজানা দ্বীপের রহস্য উন্মোচন করতে পারবে? তারা কি তাদের শিক্ষকের 'নিঃশব্দতা'র প্রকৃত অর্থ বুঝতে পারবে এবং অক্ষত অবস্থায় এই দ্বীপ থেকে ফিরে আসতে পারবে? নাকি তারাও এই রহস্যময় নীরবতার অংশ হয়ে যাবে?



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন