কাচ্চি বিরিয়ানি: এক রাজকীয় স্বাদ
কাচ্চি বিরিয়ানি—নামটা শুনলেই জিভে জল এসে যায়, আর মনে পড়ে যায় এক রাজকীয় ভোজের কথা। বাঙালির খাদ্যপ্রেমের ইতিহাসে বিরিয়ানির এই বিশেষ প্রকারটি তার সুগন্ধ, নরম মাংস আর সুস্বাদু চালের জাদুতে অতুলনীয়। এটি শুধু একটি খাবার নয়, এটি যেন এক ঐতিহ্য, যা উৎসব-পার্বণে বাঙালির হেঁশেলকে মাতিয়ে তোলে।
সাধারণ বিরিয়ানির থেকে কাচ্চি বিরিয়ানি একটু আলাদা। এর বিশেষত্ব হলো, মাংসকে কাঁচা অবস্থায় সমস্ত মশলা দিয়ে ম্যারিনেট করে, তারপর সেই মাংসের ওপর আধ সেদ্ধ চালের স্তর সাজিয়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে দমে রান্না করা হয়। এই দীর্ঘ এবং ধীর গতির রান্না প্রক্রিয়াই মাংসকে করে তোলে রসে টইটম্বুর, আর চালের প্রতিটি দানায় মিশে যায় মশলার গভীর সুবাস।
যারা একবার কাচ্চি বিরিয়ানির স্বাদ পেয়েছেন, তারা এর অতুলনীয় জাদু ভুলতে পারেন না। এর প্রতিটি কামড়ে লুকিয়ে থাকে মুঘল আমলের ঐতিহ্য আর রান্নার এক দারুণ কৌশল। এই রেসিপিটি একটু সময়সাপেক্ষ হলেও, এর ফলাফল এতটাই লোভনীয় যে আপনার সব পরিশ্রম সার্থক মনে হবে।
এইবার আপনার হেঁশেলেই তৈরি হোক সেই বিখ্যাত কাচ্চি বিরিয়ানি, যা আপনার পরিবার ও বন্ধুদের মন জয় করে নেবে। চলুন, শুরু করা যাক এই রাজকীয় পদ তৈরির প্রস্তুতি।
https://ojanapothe.blogspot.com/2025/06/blog-post_74.html
. কাচ্চি বিরিয়ানি (ঐতিহ্যবাহী ও কিছুটা জটিল)
কাচ্চি বিরিয়ানি তার অনন্য স্বাদ ও সুগন্ধের জন্য পরিচিত। এতে মাংস কাঁচা অবস্থায় মশলা মেখে ভাতের সাথে দমে রান্না করা হয়।
উপকরণ:
- খাসির মাংস/মুরগির মাংস: ১ কেজি (বড় টুকরো, হাড্ডিসহ)
- পোলাও চাল/বাসমতি চাল: ৭৫০ গ্রাম (ধুয়ে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে জল ঝরিয়ে নিন)
- পেঁয়াজ কুচি: ২ কাপ (পাতলা করে কাটা)
- আদা বাটা: ৩ চামচ
- রসুন বাটা: ২ চামচ
- টক দই: ১ কাপ
- কাজু বাদাম বাটা/পেস্ট: ২ চামচ
- পোস্ত বাটা: ১ চামচ
- শাহী জিরা গুঁড়ো: ১ চামচ
- সাদা গোলমরিচ গুঁড়ো: ১ চামচ
- জয়ফল গুঁড়ো: ১/২ চামচ
- জয়ত্রী গুঁড়ো: ১/২ চামচ
- এলাচ গুঁড়ো: ১ চামচ
- দারচিনি গুঁড়ো: ১ চামচ
- লবঙ্গ গুঁড়ো: ১/২ চামচ
- শুকনো লঙ্কা গুঁড়ো: ১ চামচ (ঐচ্ছিক)
- কাঁচা লঙ্কা: ১০-১২টি (আস্ত)
- আলু: ৪-৫টি (বড় টুকরো করে কাটা, সামান্য নুন-হলুদ মেখে ভাজা)
- সর্ষের তেল/সাদা তেল: ১/২ কাপ
- ঘি: ১/২ কাপ
- গুঁড়ো দুধ: ২ চামচ (১/২ কাপ দুধে গুলিয়ে নিন)
- গোলাপ জল: ১ চামচ
- কেওড়া জল: ১ চামচ
- জাফরান: সামান্য (২ চামচ দুধে ভিজিয়ে রাখুন)
- ফুড কালার (ঐচ্ছিক): সামান্য (দুধে গুলে)
- পুদিনা পাতা কুচি: ২ চামচ
- ধনে পাতা কুচি: ২ চামচ
- নুন: স্বাদমতো
- চিনি: ১ চামচ
- লেবুর রস: ১ চামচ
- বেরেস্তা: ১ কাপ (পেঁয়াজ কুচি সোনালি করে ভেজে)
প্রস্তুত প্রণালী:
- মাংস ম্যারিনেট: একটি বড় পাত্রে মাংসের সাথে আদা বাটা, রসুন বাটা, টক দই, কাজু বাদাম বাটা, পোস্ত বাটা, সমস্ত গুঁড়ো মসলা (শাহী জিরা, সাদা গোলমরিচ, জয়ফল, জয়ত্রী, এলাচ, দারচিনি, লবঙ্গ, শুকনো লঙ্কা), নুন, চিনি, লেবুর রস, অর্ধেক কাঁচা লঙ্কা, অর্ধেক পুদিনা ও ধনে পাতা কুচি এবং অর্ধেক ভাজা বেরেস্তা দিয়ে ভালো করে মেখে নিন। কমপক্ষে ৪-৬ ঘণ্টা বা সারারাত ফ্রিজে ম্যারিনেট করে রাখুন।
- আলু ভাজা: আলুগুলো নুন ও হলুদ মেখে সোনালি করে ভেজে তুলে রাখুন।
- ভাত তৈরি: অন্য একটি বড় হাঁড়িতে প্রচুর জল গরম করুন। এতে স্বাদমতো নুন, সামান্য গোটা গরম মসলা (এলাচ, দারচিনি, লবঙ্গ) দিন। জল ফুটে উঠলে চাল দিন। চাল ৫০% সেদ্ধ হলে (চাল টিপলে ভেঙে যাবে কিন্তু মাঝখানে শক্ত থাকবে) জল ঝরিয়ে নিন। কাচ্চির জন্য চাল বেশি সেদ্ধ করা চলবে না।
- লেয়ার তৈরি (দম দেওয়া): একটি বড় ও ভারী তলার হাঁড়ি নিন (যেটাতে বিরিয়ানি দমে দেবেন)।
- হাঁড়ির তলায় প্রথমে ম্যারিনেট করা মাংসের স্তরটা বিছিয়ে দিন।
- মাংসের ওপর ভাজা আলু ও বাকি কাঁচা লঙ্কা ছড়িয়ে দিন।
- এরপর সেদ্ধ করা চালের স্তরটা খুব সাবধানে বিছিয়ে দিন।
- চালের ওপরে বাকি অর্ধেক বেরেস্তা, পুদিনা ও ধনে পাতা কুচি, ঘি, গুঁড়ো দুধের মিশ্রণ, গোলাপ জল, কেওড়া জল, জাফরান মেশানো দুধ এবং ফুড কালার ছড়িয়ে দিন।
- দম দেওয়া: হাঁড়ির মুখ ভালো করে ঢাকনা দিয়ে বন্ধ করুন। ঢাকনার চারপাশে আটা দিয়ে বা ভারি কোনো জিনিস দিয়ে সিল করে দিন যাতে কোনো বাষ্প বের হতে না পারে।
- প্রথমে ৫-৭ মিনিট উচ্চ আঁচে গরম করুন, যেন হাঁড়ির তলাটা ভালোভাবে গরম হয়।
- এরপর আগুন একদম কমিয়ে (দম-এর আঁচ) ১ ঘণ্টা থেকে ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট দমে রাখুন।
- যদি আপনার হাঁড়ির তলা পাতলা হয়, তবে একটি তাওয়া গরম করে তার ওপর হাঁড়িটি বসিয়ে দম দিতে পারেন।
- পরিবেশন: দম হয়ে গেলে চুলা বন্ধ করে ১০-১৫ মিনিট এভাবেই রেখে দিন। এরপর সাবধানে ঢাকনা খুলে বিরিয়ানিটা হালকা হাতে মিশিয়ে নিন। গরম গরম সালাদ ও রায়তার সাথে পরিবেশন করুন মজাদার কাচ্চি বিরিয়ানি।
Tags:
রেসিপি